চলছে সীমিত পরিসরে হজ পালনের প্রস্তুতি

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক হজ। ধর্মীয় এই আচার পালনে সীমিত সংখ্যক মানুষের প্রথম দলটি সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে আরব নিউজ।

করোনা বিধি মেনে হবে এবারের হজের আনুষ্ঠানিকতা। এর অংশ হিসেবে প্রথম দলটি ২৫ জুলাই মক্কায় পৌঁছেছে।


গত মাসেই সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় জানিয়ে দেয়, চলমান মহামারির কারণে খুব সীমিত পরিসরে হবে এবারের হজ। সর্বোচ্চ ১ হাজার মানুষ হজ পালন করতে পারবেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই থাকবেন সৌদি ভূখণ্ডে অবস্থানকারীরা।

এই দলে থাকা একজন হলেন আরব আমিরাতের আব্দুল্লাহ আল-খাতিরি, যিনি কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত বছরই হজ পালন করার কথা ছিল তার। কিন্তু বিয়ের জন্য পারেননি। সীমিত পরিসরের হজেও সুযোগ পেয়ে দারুণ খুশি খাতিরি, ‘হজ পালন করা অনেকের কাছে আমি শুনেছি, অনেক মানুষের সমাগম সত্ত্বেও প্রক্রিয়াগুলো খুব সহজ হয়। এবার খুবই সীমিত সংখ্যক মানুষ থাকবে, কল্পনা করুণ ব্যাপারটা কেমন হবে। নিশ্চিতভাবে এটা হবে, অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা।’

সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যেই অনুমতি পাওয়ায় আবেগে কেঁদেই দিলেন বুলগেরিয়ান সৌদিপ্রবাসী নারী খাদিজা, ‘আমি আশাও করিনি, তারা আমার আবেদন গ্রহণ করবে। সব দিক থেকে এবারের হজ হবে ব্যতিক্রমী।’

সৌদির কাসিম প্রদেশের তিউনিসিয়ান নারী চিকিৎসক ডা. হাইফা ইউসুফ হামদুন বলেন, ‘যখন আমি আমার আবেদনের কনফারমেশন পেলাম আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলাম। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’

প্রতি বছর বার্ষিক হজের জন্য প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ মক্কা এবং মদিনায় যান। ইসলাম ধর্মে বলা আছে, শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলিমদের জীবদ্দশায় একবার হলেও হজ পালন করা উচিত।

বর্তমান পরিস্থিতিতে হজ আয়োজন করলে বিশাল জনসমাগম থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ারও শঙ্কা থেকেই হজ নিয়ে এমন কড়াকড়ি সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।

২১ জুলাই সাংবাদিকদেরকে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রী মোহাম্মাদ বেনতেন জানান, ‘সর্বোচ্চ ১ হাজার মানুষ হজ পালন করতে পারবেন; এর চেয়ে কিছু সংখ্যক কম হতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ বছর হাজিদের সংখ্যাটা কোনোভাবে এক হাজারের বেশি হবে না।’ তবে যাদের হজ পালনের সুযোগ দেওয়া হবে তাদের কিভাবে নির্বাচন করা হবে এ ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীর কারণে এবারের হজে হাজিরা কী করতে পারবেন আর পারবেন না তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বাংলা জানায়, সৌদি আরবের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে এই বছরের সীমিত আকারের হজে কিছু নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কাবা ঘর ও হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ পারবেন না যারা হজ করবেন। পাথর নিক্ষেপের যে রীতি আছে সেখানে বিশেষ ধরনের পাথর ব্যবহার করতে হবে।

হজের বিশেষ অনুমতি ছাড়া ১৯ জুলাই থেকে হজের পঞ্চম দিনের আনুষ্ঠানিকতা পর্যন্ত কেউই মিনা, মুজদালিফাহ ও আরাফাতে যেতে পারবেন না। যদি কারও মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা যায় তবে তার হজের বাকি আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর করবে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণের ওপর। উপসর্গ যদি বেশি হয় তাহলে হজে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। সকল হাজিদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। হাজিদের জন্য আলাদা ভবন, পরিবহন ব্যবস্থা রাখা হবে। মক্কার এই সুবিশাল মসজিদের সকল ফ্রিজ সরিয়ে নেওয়া হবে, যার যার ব্যক্তিগত পানির পাত্রে পানি নিয়ে পান করতে হবে। আলাদা খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। যে তাঁবুর নিচে হাজিরা অবস্থান করেন, সেখানে প্রতি ৫০ বর্গমিটারে ১০ জনের বেশি থাকা যাবে না।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ জানান, পবিত্র মক্কায় পৌঁছানোর আগে হাজিদের করোনাভাইরাস টেস্ট করা হবে। হজ শেষে ফিরে যাওয়ার পর তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে।

প্রতি বছর কুরবানির ঈদের সময় প্রায় সোয়া কোটি মুসলমানদের অংশগ্রহণে সৌদি আরবে পালিত হয় ইসলাম ধর্মের অন্যতম ‘ফরজ’ হজ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ