সাবিনা ইয়াছমিন : চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে। তবে কমেছে জিপিএ-৫ এর হার। এবার ১০ শিক্ষাবোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। গতবারের পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সে হিসাবে পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪। সেই হিসাবে কমেছে ৫ হাজার ৩৫ জন।
সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে গতবারের চেয়ে এবার ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি পাস করেছে, যা সার্বিক পাসের হার বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
গত ৬ মে সারাদেশে একযোগে ২০১৯ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে এ ফল ঘোষণা করেন।
রেওয়াজ অনুযায়ী আগে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেয়া হতো। এরপর শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতেন। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরে থাকায় তা হলো না। তবে ফল প্রকাশ উপলক্ষে লন্ডন থেকে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর বাণী পড়ে শোনান শিক্ষামন্ত্রী।
লন্ডন থেকে টেলিফোনে শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘প্রতি বছর আমি সশরীরে উপস্থিত থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করি এবং তোমাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করি। এ বছর আমি লন্ডনে সফরে থাকার কারণে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম। এ জন্য আমি তোমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আজ ২০১৯ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকম-লীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। যেসব শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারোনি, আমি তোমাদের ধৈর্য ধরে, মনোযোগসহকারে আবার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে আগামীতে ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে পারো। মানুষের অসাধ্য কিছুই নেই।’
ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভালো ফল করা স্কুলগুলোতে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। বাদ্য বাজিয়ে, হাতে হাত রেখে নেচে-গেয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। বেলা ১২ টায় স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হয় ফলাফল। একইসঙ্গে ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়। মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও পরীক্ষার ফল জানতে পারে শিক্ষার্থীরা। এবার এসএসসি ও সমানের পরীক্ষায় ২১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪১ জন ছাত্র ও ৮ লাখ ৮২ হাজার ২২৪ জন ছাত্রী। ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এসএসসিতে পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৩ ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ। বিদেশ কেন্দ্রে পাসের হার ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এছাড়া এবার ২ হাজার ৫৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছে এবং ১০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করতে পারেনি।
ঢাকা শিক্ষাবোর্ড : এবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৫ লাখ ৪৮ হাজার ২২০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৭৮ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ৮ হাজার ১৮২ জন ছাত্র এবং ২ লাখ ২৮ হাজার ২৯৬ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড: এ বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৮৮১ জন। উত্তীর্ণ হয় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৮ জন। এর মধ্যে ৯৭ হাজার ৯ জন ছাত্র এবং ৮৯ হাজার ৮১৯ জন ছাত্রী। পাসের হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড: কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে ৭৩ হাজার ৯৩৭ জন ছাত্র এবং ৯৪ হাজার ৫৪৩ জন ছাত্রী। পাসের হার ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ।
যশোর শিক্ষাবোর্ড: যশোর শিক্ষাবোর্ডে ১ লাখ ৮২ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৮ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৬৩৭ জন ছাত্র এবং ৮৪ হাজার ৫১ জন ছাত্রী। পাসের হার ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড: এ বোর্ডে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৫১ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৫৩ হাজার ৮৩৮ জন ছাত্র এবং ৬৩ হাজার ১৩ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ।
বরিশাল শিক্ষাবোর্ড: এ বোর্ডে ১ লাখ ৬ হাজার ৬২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮২ হাজার ৫৩৫ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৩৯ হাজার ১৩৮ জন ছাত্র এবং ৪৩ হাজার ৩৯৭ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
সিলেট শিক্ষাবোর্ড: এ বোর্ডে ১ লাখ ১৩ হাজার ১৭১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮০ হাজার ১৬২ জন উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৪৫৯ জন ছাত্র এবং ৪৮ হাজার ৭০৩ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড: এ বোর্ডে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৩৫ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে ৮৪ হাজার ৬২ জন ছাত্র এবং ৮২ হাজার ৭৩ জন ছাত্রী। পাসের হার ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড: এবার মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ জন পরীক্ষার্থী। উত্তীর্ণ হয় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭১০ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬২৮ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৩০ হাজার ৮২ জন ছাত্রী। পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৩ শতাংশ।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ড: এ বছর কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৩ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৯১ হাজার ২৯৮ জন উত্তীর্ণ হয়। এদের মধ্যে ৬৯ হাজার ৫১ জন ছাত্র এবং ২২ হাজার ২৪৭ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ।
ভালো ফলের নেপথ্যে
ইংরেজি ও গণিত
নির্বাচনি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের বিষয়ে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর থাকায় নির্বাচনি পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অন্যান্য কারণেও দুর্বল শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়েছে। সব মিলিয়ে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অংশ নেয়ার সুযোগবঞ্চিত হয়েছে সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের এসএসসিতে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়া এবং ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীরা সাফল্য পাওয়ায় এ বছর পরীক্ষার ফল ভালো হয়েছে।
এবারের ফল গত বছরের ঠিক উল্টো। ২০১৭ সালের তুলনায় গতবার পাসের হার কম ছিল; কিন্তু জিপিএ-৫ বেশি ছিল। আর এবার পাসের হার বেশি, জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কম। গতবারে পাস কমার নেপথ্যে ছিল ইংরেজি ও গণিত। অন্য দিকে এবারও পাসের হার বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে অনুত্তীর্ণদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়া। এ ছাড়া ইংরেজি ও গণিতের প্রভাব তো আছেই।
এবার ১০ শিক্ষাবোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। গতবারের পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সে হিসাবে পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এবার রাজশাহী, দিনাজপুর, যশোর ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার গতবারের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হরে বেড়েছে। আর মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে গতবারের চেয়ে পাসের হার বেড়েছে ১২ শতাংশেরও বেশি।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ছায়েফ উল্যা বলেন, গণিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এবার ভালো করেছে। এ কারণে সার্বিক পাসের হার বেড়েছে।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ইংরেজিতে এবার গতবারের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি পাস করেছে। গণিতে পাস করেছে সাড়ে ৩ শতাংশ বেশি। ফলের বিষয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনি পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ না করানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেয়ার পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। এসব কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডে এবার পাস করেছে ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গতবারের চেয়ে পাসের হার ১৪ শতাংশ বেশি। ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, অন্যান্য বিষয়ে সামান্য বেশি পাস করলেও গতবারের চেয়ে এ বোর্ডে গণিতে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি পাস করেছে। আর ইংরেজিতে পাস করেছে ৫ শতাংশেরও বেশি।
উত্তীর্ণদের প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকমন্ডলীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। গত ৬ মে ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি এই শুভেচ্ছা জানান। লন্ডনে অবস্থানকালীন ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোনে পাস করা শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান এবং যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের ধৈর্যসহকারে পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক এবং শিক্ষকম-লীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাগ্রতা, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রম যে কোনো অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। তোমরা যারা যে কোনো কারণেই হোক উত্তীর্ণ হতে পারনি, তাদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এখন থেকে চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই এ বাধা অতিক্রম করে ভালো ফল অর্জন করতে পারবে। যে সব শিক্ষার্থী ভালো ফল করেছ, তোমাদের এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ভবিষ্যতে আরো ভালো ফল করতে হবে।
তিনি বলেন, তোমরাই আগামীর বাংলাদেশের কর্ণধার। তোমাদেরকেই এদেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীর সেবায় নিয়োজিত হতে হবে। এজন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আয়ত্তের পাশাপাশি দেশপ্রেমিক এবং মানবিকতায় পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আগামী প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর আমি সশরীরে উপস্থিত থেকে এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করি এবং তোমাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করি। কিন্তু এ বছর লন্ডনে সফরে থাকার কারণে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম। এজন্য আমি তোমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাঁর স্বপ্ন ছিল মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্য নিরক্ষতামুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ার।
তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আগামী প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তোমরা তোমাদের মেধা-মননের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে এবং আগামীতে দেশ পরিচালনার জন্য নিজেদের যোগ্য করে প্রস্তুত করবে Ñ এই প্রত্যাশা করছি।
স্কুলে স্কুলে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
ফল প্রকাশ উপলক্ষে সকাল থেকেই স্কুলগুলোয় সাজ সাজ রব পড়ে যায়। আকাশে ঝলমলে রোদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোদের তীব্রতাও। এরই মধ্যে রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মায়াভরা মুখের ছড়াছড়ি। সকাল থেকেই বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছে পরীক্ষার্থীরা। সঙ্গে অভিভাবকরা। সবার চোখে-মুখে অস্থিরতার ছাপ। কখন ফল প্রকাশিত হবে এসএসসির ।
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ। বেলা ১২ টায় স্কুলের দেয়ালে দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয় ফলাফল। একইসঙ্গে ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়। ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভালো ফল করা স্কুলগুলোতে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের উল্লাস ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে তারা। শিক্ষার্থীদের এই মুহূর্ত ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরা। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে রাজধানীর নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল দেখার মতো দৃশ্য।
পাসের হার বৃদ্ধির কৃতিত্ব সবার
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো ব্যক্তিগত কৃতিত্বের ব্যাপার নেই। এ কৃতিত্ব শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ফল প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১০ বোর্ডে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। গেল বছর গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ, এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, পাসের হার বেড়েছে এটি আমাদের উপহারÑ এটা মনে করার কারণ নেই। পরীক্ষার্থীরাই পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল করেছে। আমরা চাই সব শিক্ষার্থী পাস করবে, কিন্তু কোনো না কোনো কারণে অনেক শিক্ষার্থী পাস করে না।
তিনি বলেন, পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এতে আমাদের মন্ত্রীদের কোনো ব্যক্তিগত কৃতিত্বের ব্যাপার নেই। এটি পুরোপুরি শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সম্মিলিত কৃতিত্ব।
কোনো কোনো বোর্ডে এবার পাসের হার চোখে লাগার মতো কমেছে ও বেড়েছে Ñ এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, এটি মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোথাও কোথাও বেড়েছে, কোথাও কমেছে। যেখানে বেশি বেড়েছে, সেখানে কোনো ধরনের শিথিলতা ছিল না।
প্রবাসী শিক্ষার্থীদের ৯১.৯৬
শতাংশ পাস
এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের বাইরে মোট ৪২৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৮৯ জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫৬ জন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সন্তানরা এই পরীক্ষায় অংশ নেয়।
৬ মে সোমবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, প্রবাসে ১০০ ভাগ পাস করেছে ৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তবে শূন্য ভাগ পাস নেই কোনো প্রতিষ্ঠানে এবং কোনো পরীক্ষার্থী বহিষ্কারও হয়নি। বিদেশে ৮টি কেন্দ্রে এবার পরীক্ষা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রিয়াদের বাংলাদেশ এম্বাসি স্কুল, ত্রিপোলির বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল, কাতারের দোহায় বাংলাদেশ মাসহুর-উল-হক মেমোরিয়াল হাই স্কুল, দুবাইয়ের শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, মানামার বাহরাইনে বাংলাদেশ স্কুল ও ওমানের বাংলাদেশ স্কুল শাহাম।
কেউ পাস করেনি ১০৭ প্রতিষ্ঠানে
২৫৮৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাই পাস
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৫৮৩টি।
ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছর কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১০৯টি। এবার এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুটি কমেছে। অন্যদিকে গত বছর ১ হাজার ৫৭৪ প্রতিষ্ঠানের সবাই পাস করেছিল। এবার এমন প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১ হাজার ৯টি।
কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের অবস্থান কীÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরেই এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়েছে। এবারও যেসব প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি তাদের শোকজ করা হবে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় আট শিক্ষা বোর্ডে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
0 মন্তব্যসমূহ