মন্ত্রিসভায় জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালার খসড়া অনুমোদন

 নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধকালীন বা সংকটে সব আধাসামরিক বাহিনী ও সহায়ক বাহিনী সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশনাল কমান্ডে থাকবেÑ এমন বিধান যুক্ত করে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা ২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে সার (ব্যবস্থাপনা) (সংশোধন) আইন-২০১৮, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে খসড়াগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভা বৈঠকে নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মৃত্যুতেও শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।



সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্যাটিসটিক্স ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংস্থার জরিপে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্থান পাওয়ায় মন্ত্রিপরিষদে অভিনন্দিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এবং এই ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করায় আন্তর্জাতিক এই গবেষণা সংস্থাটি সম্প্রতি তাদের এক জরিপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণের প্রশংসা করে তাকে এই মর্যাদা দিয়েছে এবং তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া বাংলাদেশের জনগণের জন্য সৌভাগ্যের বলে অভিহিত করেছে।


১৯ মার্চ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এসব তথ্য অবহিত করেন। এছাড়াও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করে তাঁকে অভিনন্দিত করা হয় মন্ত্রিসভায়।

জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা-২০১৮ এর খসড়া অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি একটি ব্রডবেজ (বিস্তৃত) নীতিমালা। সুনির্দিষ্টভাবে আইনের মতো নয়, নীতিমালা হওয়ায় জেনারালাইজড ফর্মে এটি আনা হয়েছে। এটি বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে দেয়া হয়েছে। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু একটি নীতিমালা দিয়ে গিয়েছেন। সেটার ওপর ভিত্তি করে আরও বিস্তৃতভাবে নতুন নীতিমালাটি করা হয়েছে। এই নীতিমালায় প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় সরকারের সাধারণ রূপরেখা বর্ণিত হয়েছে। এর লক্ষ্য জাতীয় অগ্রগণ্যতা, আইনি কাঠামো ও সম্পদের ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর যথাযথ ভূমিকায় গণমতের প্রতিফলন ঘটানো। এই প্রতিরক্ষা নীতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের প্রতিরক্ষা পরিবেশ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবে। এছাড়াও এই দলিল সার্বিক পরিসরে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগের চলমান ও পরিকল্পিত সক্ষমতা ও ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা দেবে।

মুখ্য জাতীয় মূল্যবোধসমূহ, জাতীয় লক্ষ্য ও প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্য, জাতীয় স্বার্থ, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার মৌলিক বিষয়সমূহ নীতিমালার মধ্যে আনা হয়েছে। প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর মূল সক্ষমতা কী হবে, যুদ্ধকালীন সশস্ত্র বাহিনী কিভাবে মোতায়েন হবেÑ এসব বিষয়ে নীতিমালায় বিস্তারিত বলা হয়েছে।

সামরিক ও অসামরিক সম্পর্ক কী হবে, সশস্ত্র বাহিনী ও নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে এটা আরেকটা চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক কী হবে সেটাও ডিটেল করা আছে। প্রতিরক্ষা গঠন অর্থাৎ জাতীয় ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা সংস্থাসমূহ কী হবে যেমন নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কমিটি, মন্ত্রিসভা কমিটি। এগুলো অলরেডি আছে। জাতীয় কমিটি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, সেভাবেই হবে। আর প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি যেটা, যিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকবেন তার নেতৃত্বে পরিচালিত হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী সংসদ আগের মতোই প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করবে। তারা প্রতিরক্ষা বিষয়গুলো ডিল করবে। ক্রাইসিস বা যুদ্ধকালীন আধা-সামরিক ও সহায়ক বাহিনী সামরিক বাহিনীর কমান্ডে থাকবে। যেমন বিজিবি, কোস্টগার্ড, বিএনসিসি, পুলিশ বাহিনী, আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা দল ক্রান্তিকালীন সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। নীতিমালার উপসংহারে বলা হয়েছে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকলকে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। যার ক্রমধারায় যুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গড়ে ওঠে এবং জনগণের সঙ্গে একীভূত থেকে স্বাধীনতা অর্জনে অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। জনসম্পৃক্ত থাকার এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখ-তা রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে একটি যথোপযুক্ত সশস্ত্র বাহিনী।

১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সশস্ত্র বাহিনীকে ‘তোমরাই হবা আমার পিপলস আর্মি’ এই বলিষ্ঠ আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই গণসম্পৃক্ততা আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাষ্ট্রনায়কদের দূরদর্শিতায় এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজন অনুযায়ী জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি গণসম্পৃক্ত ও আধুনিক পেশাগতভাবে দক্ষ সশস্ত্র বাহিনী গড়ার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে উপসংহারে বলা হয়েছে।

নীতিমালায় উল্লেখ করা গণমাধ্যমের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সচেতন নাগরিক সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে ভালো বন্ধু। নিরাপত্তা সম্পর্কিত অনুমোদিত তথ্য দায়িত্বশীল প্রচারণার মাধ্যমে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং একটি বন্ধুপ্রতিম গণমাধ্যম-সামরিক সম্পর্ক অপরিহার্য। গণমাধ্যম-সামরিক সম্পর্ক অত্যন্ত সংবেদনশীল। কারণ এ দুটি প্রতিষ্ঠান জাতীয় সক্ষমতার উপাদান। উভয়ই নিজ নিজ অবস্থান থেকে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।



Post a Comment

0 Comments