রাজউক নিয়ে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

 শ ম রেজাউল করিম স্বদেশ খবরকে আরো বলেন, ইতোমধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়াধীন সব উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেবা সহজীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভবন নির্মাণ অনুমোদনের সময় ১৬৫ দিনের স্থলে ৫৩ দিনে নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজউকের নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে পূর্বে ১৬টি সংস্থার কাছে যেতে হতো। অপ্রয়োজনীয় প্রতীয়মান হওয়ায় ১২টি সংস্থা রহিত করে দেয়া হয়েছে।


ভূমির ছাড়পত্র ও নামপত্তনের সময়সীমা ৭ দিন করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে এটা একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এর পাশাপাশি রাজউকের সব সেবা সম্পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতিতে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সেবা সহজীকরণ ও সেবাগুলো অনলাইনে প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজউকের নতুন চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নূর আলম স্বদেশ খবরকে বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। টিআইবি অভিযোগ করেছে, রাজউকে নিয়োগবাণিজ্য হয়। অথচ বর্তমান মন্ত্রী বা আমার সময়ে রাজউকে কোনো নতুন নিয়োগই হয়নি। সুতরাং বুঝাই যায়, অভিযোগটি মনগড়া ও বিদ্বেষপ্রসূত।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাজউক চেয়ারম্যান সাঈদ নূর আলম বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং তারাবো ও সাভার পৌরসভা ছাড়াও কালিগঞ্জ, সোনারগাঁও ও কাঞ্চন পৌরসভার অল্প কিছু এলাকা মিলে ১৫২৮ বর্গকিলোমিটারের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে রাজউকের জনবল রয়েছে কেবলমাত্র ১১৫৮ জন। এ সীমিত জনবল দিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বিশাল এলাকাকে ৮টি জোনে ভাগ করে কাজ করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তাই শত সীমাবদ্ধতার মাঝেই প্রতিনিয়ত আমাদের কাজ করতে হয়।

সাঈদ নূর আলম স্বদেশ খবরকে আরো বলেন, আমি রাজউকের দায়িত্ব নেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে টিআইবি এমন একটি প্রতিবেদন দিল। আমি দায়িত্ব নেয়ার আগের অবস্থা নিয়ে টিআইবি প্রতিবেদনটি দিলেও রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত। স্বদেশ খবর-এর মাধ্যমে আমি মহানগরবাসীকে কথা দিচ্ছি, রাজউকের আগামী দিনের কার্যক্রম হবে আরো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। রাজউকের সেবা নিতে এসে যেকোনো নাগরিক যদি হয়রানির শিকার হন, তাহলে সরাসরি আমার কাছে আসার জন্য তাদের অনুরোধ করছি। রাজউকে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বাস্তবায়নে আমি সর্বান্তকরণে সচেষ্ট থাকবো। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার সর্বোচ্চ অবস্থানের জন্যই সরকারপ্রধান আমাকে রাজউকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে মনে করি। সরকারপ্রধানের সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষার্থে সর্বদা সচেষ্ট থেকে রাজউককে একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সাধ্যমতো চেষ্টা অব্যাহত রাখতে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।


শেষ কথা

নগরবিদরা বলছেন, বাসযোগ্য রাজধানী গড়তে হলে রাজউককে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করাও জরুরি। অতিরঞ্জিত অভিযোগ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনোবল ভেঙে দিতে পারে, যা মোটেও কাম্য নয়। টিআইবির মতো দায়িত্বশীল সংস্থার উচিত হবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সহকারে কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা। কারণ রাজউক আজকের প্রতিষ্ঠান নয়; ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এটি গড়ে উঠেছে। দুর্নীতি-অনিয়মও একদিনের বিষয় নয়। মুষ্টিমেয় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি অনিয়মে জড়িয়েই পড়ে তার জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা চলে না। তাছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক রাজউকের বর্তমান নেতৃত্ব অভ্যন্তরীণভাবেই বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। সুতরাং সীমিত জনবল দিয়ে বিশাল এলাকাব্যাপী রাজউকের সক্রিয় অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে টিআইবিসহ সকলের এগিয়ে আসা উচিত।

Post a Comment

0 Comments