নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেয়াসহ স্বাস্থ্যখাতে নানা দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি সামনে এসেছে। এসব দুর্নীতি দূর করে আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জে নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেছেন, দুর্নীতির জন্য শুধু সরকারকে দায়ী না করে সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে সৎ হতে হবে। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগে ২৫ জুলাই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ মন্তব্য করেন তিনি।
খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে সৎ না হই, তাহলে কোনোভাবেই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। আমি বলব দুর্নীতির দায় আমাদের সবার। আমরা যদি শুধু সরকারের দিকে আঙুল তুলি, সেটা হবে সবচেয়ে বড় বোকামি। আমরা সবাই এই দুর্নীতির অংশ।’
স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন মহাপরিচালক হিসেবে কী চ্যালেঞ্জ দেখছেনÑ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সামনে অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ, স্বাস্থ্যে এখন যে ব্যবস্থা, এই প্যানডেমিকের ক্ষেত্রে আমরা যে সমস্যাগুলো ফেইস করছি, তা দূর করার চেষ্টা করব।’
প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা যেন সম্মান ও ইজ্জত নিয়ে শেষ করতে পারেন, সেজন্য সবার দোয়া চান অধ্যাপক খুরশীদ। এই মহামারীতে সাংবাদিকদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের সমালোচনা অবশ্যই করবেন, ভুলত্র“টি ধরিয়ে দেবেন। পাশাপাশি আমরা যদি কোনো ভালো কাজ করি সেটাও তুলে ধরবেন।’
করোনার নমুনা পরীক্ষা, কিট, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি, নকল মাস্কসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিভেদে জড়িয়ে পড়ে এর ঊর্ধŸতন কর্মকর্তারা। একের পর এক বিতর্কের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। ডিজি পদত্যাগপত্র জমা দেন ২১ জুলাই। পদত্যাগপত্রে কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
গত ২৩ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মো. আবু রায়হান মিঞা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়। হানিমুন পিরিয়ড ছাড়াই আগের ডিজির রেখে যাওয়া কেলেঙ্কারির দায় গোছাতে কাজ শুরু করতে হয়েছে নতুন ডিজিকে। সাধারণ জনগণের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন তাঁর চ্যালেঞ্জÑ বলছিলেন এখাতে সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, নতুন ডিজিকে পুরনো সব কেলেঙ্কারি ঢেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বয় করতে হবে। তারা বলেন, সবার আগে তাকে জনস্বাস্থ্য বুঝতে হবে। যেটি আগের ডিজির কিছুটা ঘাটতি ছিল। তাছাড়া এবিএম খুরশীদ আলমের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একেবারেই নতুন জায়গা। সাধারণত, অধিদপ্তরে অনেক বছর কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কেউই মহাপরিচালক হয়ে থাকেন। সাধারণ অতিরিক্ত পরিচালক, পরিচালক থেকে ডিজি হয়ে থাকেন। কিংবা কোনো হাসপাতালে প্রশাসনিকভাবে দক্ষ কোনো অভিজ্ঞ স্বাস্থ্যবিদকে এ ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, নতুন ডিজিকে যোগদানের মুহূর্ত থেকেই গতিশীল এবং আগের ডিজির ত্র“টিগুলো মাথায় রেখে পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করে যেতে হবে। মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা চলছে এর দিকে নজর দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সাহেদ ও সাবরিনার ঘটনার পর মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কেউ কারও সঙ্গে তেমন একটা কথা বলে না। কার কখন ডাক পড়ে ঠিক নেই। তিনি জানান, আরও অনেক পরিবর্তন আসবে।
0 মন্তব্যসমূহ