নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারের গৃহীত কিছু সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) রপ্তানি আয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ। পোশাক শিল্পের ওপর ভর করেই এই রপ্তানি আয় বেড়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় এবং সরকারের যথাযথ নির্দেশনায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত হওয়ায় রপ্তানি আয় বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৭২ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। তবে রপ্তানি আয় ল্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছে। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে সর্বশেষ মে মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয়ের ল্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩৮৭ কোটি ৭ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৭২ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার। আর গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ১৬২ কোটি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে মে মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। ল্যমাত্রা ছিল ৩৩৮ কোটি ডলার। গত বছর মে মাসে আয়ের পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ৭৬ লাখ ডলার।
প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের আয় ধারাবাহিকভাবে ভালো হওয়ায় রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ শামসুল আলম স্বদেশ খবরকে বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত মূলত পোশাকনির্ভর। রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান দিন দিন বাড়ছে। তবে রপ্তানি আয় আরো বাড়াতে প্রচলিত বাজার ছাড়াও নতুন বাজারের সম্ভাবনা কাজে লাগানো এবং পোশাকের পাশাপাশি পণ্য বহুমুখীকরণ বিশেষ করে বেশি মূল্য সংযোজন হয় এমন পণ্য রপ্তানির প্রতি মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এ বিষয়ে স্বদেশ খবরকে বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে পোশাক খাত রপ্তানিতে ভালো করছে। চলতি বাজেটে করপোরেট করহার কমানো হলে পোশাক থেকে রপ্তানি আয় আরো বাড়বে। তিনি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি বাড়াতে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিল্প পণ্যের েেত্র সরকারের নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা দেয়ার সুপারিশ করেন।
ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাক খাতের নিট পণ্য (সোয়েটার, টি-শার্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয় ও প্রবৃদ্ধি ল্যমাত্রার তুলনায় দুই-ই বেড়েছে। ১ হাজার ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ ডলারের ল্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ল্যমাত্রার তুলনায় ২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে নিট পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ১ হাজার ২৫০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে ওভেন পণ্যেও (শার্ট ও প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এেেত্র প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। ১ হাজার ৩৬০ কোটি ৫ লাখ ডলারের ল্যমাত্রার বিপরীতে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪১৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩১১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।
জুলাই-মে সময়ে বড় কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। এই খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যার প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে উল্লেখ করার মতো ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে এই খাত থেকে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে। বেডশিট, কিচেন টয়লেট লাইনসসহ হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া হিমায়িত মাছ, রাসায়নিক পণ্য সিমেন্ট, সল্ট, স্টোন, ইমারত তৈরির সরঞ্জাম ও সিরামিকসের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। গত বছরের প্রথম ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ১১২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার, এবারের একই সময়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
0 মন্তব্যসমূহ