বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের অবসান : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণবিধির গেজেট প্রকাশ

 নিজস্ব প্রতিবেদক : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণবিধির গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত সব বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিধান রেখে এই গেজেট জারি করা হয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা এ ব্যবস্থাকে ভারসাম্যপূর্ণ বলে অভিমত দেয়ায় নিঃসন্দেহে বলা যায়, গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে এ নিয়ে চলমান দীর্ঘদিনের টানাপড়েনের অবসান ঘটল।


নিম্ন আদালতের বিচারকদের পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ, অনুসন্ধান, তদন্ত, দ- ও বিভাগীয় মামলা রুজু ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালায়। ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭’ নামে ওই বিধিমালা ১১ ডিসেম্বর গেজেট আকারে জারি করেছে সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ।

বিচারকদের পেশাগত অসদাচরণ বলতে বিধিমালার কোনো বিধান মেনে না চলা বা এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো কাজ করা বা এতে নির্দেশিত কাজ করা থেকে বিরত থাকা; চাকরির শৃঙ্খলার জন্য তিকর কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া; স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে আইনসঙ্গত আদেশ বা নির্দেশ পালন না করা বা তা অমান্য করা বা সে অনুসারে কর্তব্য সম্পাদনে অবহেলা করা এবং সার্ভিসের কোনো সদস্য বা সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারক বা আদালতের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো কর্তৃপরে কাছে মিথ্যা, তুচ্ছ ও বিরক্তিকর অভিযোগ পেশ করাকে বোঝানো হয়েছে।

বিধিমালার সপ্তম অধ্যায়ে (বিবিধ) ‘সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শের কার্যকরতা’ শীর্ষক বিধিতে বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপ (রাষ্ট্রপতি অথবা মন্ত্রণালয়) সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অনুসারে এই বিধিমালায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব পদপে নেবে। উপযুক্ত কর্তৃপরে প্রস্তাব ও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অভিন্ন না হলে সে েেত্র সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, জুডিশিয়াল সার্ভিসের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার আনুষঙ্গিক সব পদপে নেয়া যাবে যদি কোনো কর্মকর্তা শারীরিক বা মানসিক অদতা ছাড়া কোনো অসদাচরণের সঙ্গে জড়িত হন। এসবের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতিমূলক কাজ বা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সংজ্ঞাভুক্ত কোনো কাজ বা পরিস্থিতি, রাষ্ট্রের জন্য তিকর কাজের সংজ্ঞাভুক্ত কোনো কাজ বা পরিস্থিতি, সার্ভিস ত্যাগের সংজ্ঞাভুক্ত কোনো কাজ এবং ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ। তবে বিভাগীয় মামলা রুজু করার আগে অভিযুক্ত বিচারক বা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ দিতে হবে। এ েেত্র সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ না নিয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া যাবে না। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলেই কেবল অনুসন্ধান, তদন্ত ইত্যাদি শেষ করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেই কেবল অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

বিধিমালায় বিচার বিভাগীয় কোনো কর্মকর্তার অসদাচরণ বা কোনো অপরাধের জন্য দুই ধরনের দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। একটি লঘুদ- আরেকটি গুরুদ-। পাঁচ ধরনের লঘুদ-ের মধ্যে আছে তিরস্কার বা ভর্ৎসনা, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদোন্নতি স্থগিত রাখা, যা ১ বছরের বেশি হবে না, পেনশনের ওপর কোনো প্রভাব আরোপ না করে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি ৩ বছর পর্যন্ত স্থগিত রাখা, পেনশনের ওপর কোনো প্রভাব আরোপ না করে বেতন স্কেলের নিম্নধাপে ৩ বছর পর্যন্ত বর্ধিতযোগ্য সময়ের জন্য অবনমিত করে দেয়া এবং সরকারের আর্থিক তি হলে তার প্রাপ্য বেতন বা আনুতোষিক থেকে ওই তির সম্পূর্ণ বা আংশিক আদায় করা। আর গুরুদ-ের ধাপ রয়েছে ৮টি।

এক. সার্ভিসে প্রবেশপদ ছাড়া অন্যান্য পদে কর্মরত অভিযুক্ত কর্মকর্তার েেত্র তার বেতন বর্তমান বেতন স্কেলের এক ধাপ নিম্নতর স্কেলে অবনমিত করা।

দুই. ওই কর্মকর্তার ভবিষ্যৎ পদোন্নতি বন্ধ করা।

তিন. সার্ভিসের যেকোনো পদে কর্মরত কর্মকর্তার েেত্র চাকরির মেয়াদ যা-ই হোক না কেন, স্বীয় বেতন স্কেল রেখে বা একধাপ নিম্ন বেতন স্কেলে অবনমিত করে অবসর সুবিধাসহ বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান।

চার. চাকরি থেকে বরখাস্ত করা, যা পেনশন প্রাপ্তি বা ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার চাকরিপ্রাপ্তির েেত্র বাধা হবে।

পাঁচ. চাকরি থেকে অপসারণ, যা পেনশন প্রাপ্তি বা ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার চাকরিপ্রাপ্তির েেত্র বাধা হবে না।

ছয়. চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া; যে েেত্র যোগ্যতা সাপেে ভবিষ্যতে সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার চাকরি লাভের সুযোগ অবারিত থাকবে।

সাত. বেতন স্কেলের প্রারম্ভিক ধাপে স্থায়ীভাবে অবনমিত করে দেয়া এবং

আট. বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া।

চূড়ান্ত শাস্তি দেয়ার আগে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে বিচার বিভাগীয় সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করার বিধানও রয়েছে বিধিমালায়। এর তৃতীয় অধ্যায়ের ১১ বিধিতে সাময়িক বরখাস্তের বিধান ও মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জুডিশিয়াল সার্ভিসের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অন্য বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা রুজুর সময় বা পরবর্তী যেকোনো পর্যায়ে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অনুসারে উপযুক্ত কর্তৃপ লিখিত আদেশ দ্বারা অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। তবে শর্ত রয়েছে, সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শক্রমে সাময়িক বরখাস্ত করার পরিবর্তে অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে নির্ধারিত মেয়াদে ছুটির প্রাপ্যতা সাপেে বেতন-ভাতাসহ ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া যাবে। সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালে সার্ভিস সদস্য কোনো বিচারিক বা দাপ্তরিক কাজ করতে পারবেন না। সাময়িক বরখাস্তের মেয়াদ হবে ১ বছর। ১ বছরের মধ্যে অভিযুক্ত সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে চূড়ান্ত আদেশ দিতে হবে। তা না হলে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাহার হয়েছে বলে গণ্য হবে। তবে সার্ভিসের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে, ওই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বলবৎ থাকবে।

গেজেট জারি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অরে অরে পালন করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে এই শৃঙ্খলাবিধির গেজেট করা হয়েছে। এই শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। কিন্তু আমি আপনাদের বলছি, বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। ফলে ‘রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির পরামর্শে এবং সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী শৃঙ্খলাবিধি করা হয়েছে।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার প্রতি ইঙ্গিত করে আইনমন্ত্রী বলেন, এর আগেও গেজেট করা হয়েছিল; কিন্তু এক ব্যক্তির কারণে গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হয়েছে।

জানা গেছে, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট করতে এ পর্যন্ত ২৫ বার সময় নিয়েছে সরকার। কিন্তু সর্বশেষ সময় নেয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সমঝোতার ভিত্তিতে গেজেট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর এ বিষয়ে নতুন খসড়া করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠানো হয়। সুপ্রিমকোর্টের সবুজ সংকেত পেয়ে সেটি পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর গেজেট আকারে জারির মধ্য দিয়ে ১৮ বছর আগের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয়েছে।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের টানাপড়েন চলছিল অনেক দিন ধরেই। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণমতা রাষ্ট্রপতির হাতে রেখে বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে তা সুপ্রিমকোর্টে দাখিল করেছিল আইন মন্ত্রণালয়। তখনকার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপতির বদলে সুপ্রিমকোর্টের হাতে মতা নেয়ার প্রস্তাব করে খসড়াটি সংশোধন করে দিয়েছিলেন। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু সরকার সেটা না করে বারবার সময় নিতে থাকে।

গত বছর ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ, যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি। এরপর ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব আদালতে হাজির হয়ে রাষ্ট্রপতির একটি প্রজ্ঞাপন দাখিল করেন। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গেজেট জারির প্রয়োজন নেই। এরপরও আপিল বিভাগ ১৫ জানুয়ারির মধ্যে গেজেট জারির নির্দেশ দেন। কিন্তু গেজেট জারি না করে একের পর এক সময়ের আবেদন করে রাষ্ট্রপ। এ প্রোপটে গত ১৬, ২০ ও ২৭ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। ২৭ জুলাই খসড়া হস্তান্তর করেন। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট ওই খসড়া গ্রহণ করেননি। এরপর থেকে রাষ্ট্রপ আবারও সময়ের আবেদন করছিল।

সরকারের সবচেয়ে বড় আপত্তির জায়গা ছিল নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণমতা কার হাতে থাকবে তা নিয়ে। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে এ মতা রাষ্ট্রপতির হাতে। তবে সুপ্রিমকোর্ট রাষ্ট্রপতিকে বাদ দিয়ে এ ক্ষমতা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রস্তাব করেন। রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক মতা সুপ্রিমকোর্ট নিতে চানÑ এমনটি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী একাধিকবার বলেন, সেটা সংবিধানসম্মত হবে না। এরপরও তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুপ্রিমকোর্টের প্রস্তাব অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ করতে চাপ সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে সুপ্রিমকোর্টে শুনানির সময় অ্যাটর্নি জেনারেলকে হুমকি দিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরকার মানছে না কেন? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কী পরিণতি, এটা জানেন তো?’ এরপর সরকারের সঙ্গে তখনকার প্রধান বিচারপতির দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।

এ বিষয়ে সরকারের করা খসড়ার পাঁচটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে খসড়া সংশোধন করে দেন আপিল বিভাগ। এতে বিচার বিভাগের স্থানীয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপ হিসেবে সরকারের প্রস্তাব বাতিল করে সুপ্রিমকোর্টকে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপ বলা হয়। এছাড়া সরকার কর্তৃক গেজেট জারির বিধান বাতিল করে সুপ্রিমকোর্ট যে তারিখে বিধিমালা কার্যকর করতে বলবেন সেই তারিখে আইন মন্ত্রণালয়ের গেজেট জারি করার এবং সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শে বিধিমালা কার্যকর করার বিধান যুক্ত করা হয়। প্রেষণে সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগে দায়িত্বরত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তির বিধান করা হয় খসড়ায়। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট এ বিধান বাদ দেয়। অভিযোগ ওঠার পর অনুসন্ধান করা নিয়েও সরকারের খসড়া নিয়ে আপত্তি ছিল সুপ্রিমকোর্টের।

তবে দৃশ্যপট পাল্টে যায় গত ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের পর। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ১৬ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেই নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের সমঝোতা হয়। এরপর নতুনভাবে বিধিমালার খসড়া তৈরি করে আইন মন্ত্রণালয়। ওই খসড়া সুপ্রিমকোর্টে পাঠানোর পর সুপ্রিমকোর্ট তাতে ইতিবাচক সম্মতি প্রদান করে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, গেজেট না পড়েই কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। এ গেজেটের মাধ্যমে কোনোভাবেই নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের মতা আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে নেয়া হয়নি। সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদাও কোনোভাবেই ুণœ করা হয়নি। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতির ব্যবস্থা নেয়ার যে মতা ছিল তাই রয়েছে। ফলে সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদাকে বাড়ানো হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অরে অরে পালন করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছে এই শৃঙ্খলাবিধির গেজেট করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সংবিধান নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল তাদের সেই ষড়যন্ত্র ভেঙে গেছে। সংবিধান নিয়ে আর কাউকে ফুটবল খেলতে দেয়া হবে না।’

আইনমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালার ২৯ বিধির (২) উপবিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে উপযুক্ত কর্তৃপরে (রাষ্ট্রপতির) প্রস্তাব ও সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ অভিন্ন না হলে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ প্রাধান্য পাবে, যা আগে কখনই ছিল না। তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে শিরোধার্য মনে করে এই বিধিমালা করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এবং আপিল বিভাগের সব বিচারপতির সঙ্গে বসেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মাসদার হোসেন মামলার যে ১২টি নির্দেশনা ছিল তার সাত নম্বর নির্দেশনায় যা ছিল সেটাকেও এটার মধ্যে গ্রহণ করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই আচরণবিধি করা হয়েছে। সবার চাহিদা অনুযায়ী এই আচরণবিধি করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময়ই সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে গাইডলাইন হিসেবে গ্রহণ করেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ