অত্যাবশ্যকীয় নানান নাগরিক সুবিধাপ্রাপ্তি সহজ করে মানুষের জীবনযাত্রা রীতিমতো পাল্টে দিয়েছে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্ট কার্ড। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এই উদ্যোগ শুধু নতুন মাত্রাই আনেনি, বহুমাত্রিক প্রতারণামূলক অপতৎপরতাও বন্ধ হয়ে গেছে স্মার্ট কার্ডের ব্যবহারে।
বিদেশে দুর্ঘটনায় নিহত অনেক বাংলাদেশির লাশ এক সময় বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হতো, স্মার্ট কার্ডের ডেটাবেজের কারণে এখন আর সেটা হচ্ছে না। স্মার্ট কার্ডের বদৌলোতে এখন আর বেওয়ারিশ লাশের কথা শোনাই যায় না। এভাবে স্মার্ট কার্ডের নানামুখী সুফল পাচ্ছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। তাই দলমত নির্বিশেষে সবাই সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে সত্যিই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে স্মার্ট এক বাংলাদেশের। এর আগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজটি সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মকা-ে জালিয়াতি ও ডুপ্লিকেশন ঠেকানো এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে স্মার্ট কার্ড প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
স্মার্ট কার্ড মূলত জাতীয় পরিচয়পত্রের ডিজিটাল ও অত্যাধুনিক সংস্করণ, যেখানে নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য কেন্দ্রীয় সার্ভারে ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকে। একজন নাগরিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয় স্মার্ট কার্ডের ব্যবহারে। তাছাড়া জাল-জালিয়াতি করে একাধিকবার অথবা মৃত ব্যক্তির নামে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের উপায়টি স্মার্ট কার্ড প্রণয়নের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রাপথে গত ২ অক্টোবর ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের উদ্বোধন করেন; যা সরকারের ডিজিটালাইজেশন ভিশন বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন তথা সবার হাতে স্মার্ট কার্ড তুলে দিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে জনবল ও ক্ষমতা দিয়ে চালু করা হয়েছে জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগের নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বর্তমানে এ বিভাগের প্রধান ও মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে তিনি সাপ্তাহিক স্বদেশ খবরকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওই রূপরেখায় একটি উন্নত দেশ গড়তে যা যা করণীয় তার প্রায় সবই সন্নিবেশ করেন। পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিতে সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, অগ্রসর জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদনব্যবস্থায় দক্ষ কর্মীবাহিনী, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ Ñ সব মিলিয়ে তিনি একটি তথ্যজ্ঞানভিত্তিক দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেশবাসীকে দেখিয়েছেন। এখন যা আর কল্পনা নয়, বাস্তবেই দৃশ্যমান হয়েছে; স্মার্ট কার্ড তারই একটি অংশ।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম আরও বলেন, আক্ষরিক অর্থেই উন্নত দেশগুলোর মতো স্মার্ট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এটা যে কথার কথা নয়, স্মার্ট কার্ড তারই প্রমাণ। বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক দেশের সব নাগরিককে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।
সরকারের অঙ্গীকার, নাগরিকরা
পাবে স্মার্ট কার্ড
নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড দেয়ার জন্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সিটি করপোরেশন/পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ড এবং গ্রামীণ ভোটারদের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যাম্প করে কার্ড সরবরাহ করা হয়। হাতের আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি দিয়ে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে হয়। সেইসঙ্গে আগের নেয়া লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রটিও জমা দিতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ ৩ মিনিট সময় লাগে।
জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বদেশ খবরকে বলেন, সরকার ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে সহায়তা প্রদান প্রকল্প হাতে নেয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নিবন্ধিত ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করার পাশাপাশি একটি জাতীয় তথ্যভা-ার প্রস্তুত করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও সঠিকভাবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং এর ব্যবহার ও যথার্থতা যাচাইয়ের পদ্ধতি হিসেবে কমপ্রিহেনসিভ নেশন-ওয়াইড আইডেন্টিফিকেশন, এনআইডি ব্যবস্থা প্রচলন করা হয়, যা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে এ তথ্যভা-ার তথা ডেটাবেজ নাগরিক শনাক্তকরণে স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করছে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের অক্টোবর থেকে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পারসোনালাইজেশন ও বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রথমদিকে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ওবারথার টেকনোলজিস এই কার্যক্রম সম্পাদন করলেও ২০১৭ সালের জুলাই থেকে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকার দেশের সব নাগরিককে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। এখন প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি কার্ড কাস্টমাইজেশন সম্পন্ন হয়েছে।
দেশেই তৈরি হচ্ছে স্মার্টকার্ড
ভবিষ্যতে হবে রপ্তানি
স্বদেশ খবর-এর সাথে আলোচনায় জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আগে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান থেকে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করা হলেও দেশের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, বিদেশ থেকে আমদানি নয়, আমরা নিজেরাই স্মার্ট কার্ড তৈরি করব। এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেশেই এখন স্মার্ট কার্ড তৈরি হচ্ছে। সেনাবাহিনী যে গতিতে কাজ করছে, তাতে আগামীতে আমরা স্মার্ট কার্ড আমদানি তো করবোই না, উল্টো রপ্তানি করতে সক্ষম হবো। সেদিন বেশি দূরে নয়, আমরা আশা করছি, আগামী বছর জুলাই থেকেই আমরা স্মার্ট কার্ড বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্মার্ট কার্ডের ডিজাইন, উপাদান, আয়ুষ্কাল, কার্ডে সংযোজিত চিপের ধরন, চিপের আয়ুষ্কাল, স্মার্ট কার্ডের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, কার্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক মান, কার্ডে ব্যবহৃত চিপের তথ্য ধারণক্ষমতা, চিপের অপারেটিং সিস্টেমসহ এনআইডি প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বদেশ খবর প্রতিবেদকের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
লেমিনেটেড কার্ড বনাম স্মার্টকার্ড
কেন এই উদ্যোগ
জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বদেশ খবরকে বলেন, কাগজে মুদ্রিত লেমিনেটেড পরিচয়পত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা জাল করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগ সরকারের সেই উদ্যোগ নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, স্মার্ট কার্ডে নিরাপত্তামূলক বিভিন্ন সুবিধা থাকার কারণে নকল করা খুবই কঠিন। স্মার্ট কার্ডের আকৃতি আগের কাগজের তৈরি জাতীয় পরিচয়পত্রের মতোই। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে স্মার্ট কার্ডের বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রে ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডেন্টিটি নম্বর প্রচলন করা হয়েছে, যা আগে ব্যবহৃত জাতীয় পরিচয়পত্রের আইডি নম্বরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। প্লাস্টিক ও পলিমারের মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে স্মার্ট কার্ড। ফলে কার্ডটি মজবুত এবং প্রায় ১৫ বছর স্থায়ী হবে।
স্মার্টকার্ডে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্যাবলি
স্মার্ট কার্ডে রয়েছে একটি চিপ, যা মেশিনের সাহায্যে রিড করা যায়, সেখানে নাগরিকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। স্মার্ট কার্ডটি তৈরি করা হয়েছে ব্যক্তির চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং ১০ আঙুলের ছাপ দিয়ে, যা নিরাপত্তার দিকটি সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বজায় রাখবে। স্মার্ট কার্ডে প্রত্যেক নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। এগুলো হলো, ব্যক্তির নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, পেশা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মতারিখ, রক্তের গ্রুপ, জন্মনিবন্ধন সনদ, লিঙ্গ, জন্মস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দৃশ্যমান শনাক্তকরণ চিহ্ন, ধর্ম। থাকবে ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি। ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট নম্বর, আয়কর সনদ নম্বর, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর, মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, স্বামী বা স্ত্রীর নাম ও পরিচয়পত্র নম্বর (থাকলে) এবং মা-বাবা, স্বামী বা স্ত্রী মৃত হলে সে সংক্রান্ত তথ্য, অসামর্থ বা প্রতিবন্ধী হলে সেই তথ্যও উল্লেখ করতে হয়।
আগের জাতীয় পরিচয়পত্রে বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে পিতার নাম ব্যবহারের সুবিধা ছিল না। স্মার্ট কার্ডে তা যুক্ত করা হয়েছে। নারীরা স্বামীর নামের পরিবর্তে চাইলে বাবার নাম যুক্ত করতে পারবেন।
জানা যায়, বিভিন্ন অবৈধ কাজে অনেকে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ব্যবহার করছিল। আগের জাতীয় পরিচয়পত্র ভোটদান ও সীমিত কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার হতো। সেখানে বিস্তারিত তথ্য যেমন ছিল না, তেমনি নিরাপত্তামূলক তেমন বৈশিষ্ট্যও ছিল না। সে কারণে স্মার্টকার্ডে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
তিন স্তরে মোট ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে স্মার্ট কার্ডে। প্রথম স্তরের নিরাপত্তা চিহ্নগুলো খালি চোখেই দেখা সম্ভব। ব্যবহারকারী সহজেই বুঝতে পারবেন। দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা সম্ভব। আর তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য দেখতে প্রয়োজন পড়বে ফরেনসিক টেস্টের।
স্মার্ট কার্ড থাকা সব নাগরিকের তথ্য একটি সার্ভারে জমা থাকবে। আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন স্তরে কঠোর নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে হ্যাকারদের পক্ষে তথ্য চুরি সম্ভব হবে না। আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট তথ্য সার্ভারে সংরক্ষণ হবে বাইনারি কোড আকারে।
স্মার্টকার্ড থেকে প্রাপ্ত সেবাসমূহ
স্মার্ট কার্ড প্রাত্যহিক জীবনের নানা ক্ষেত্রে নানা ধরনের সেবা প্রাপ্তিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র যে কাজে লাগতো সেই কাজগুলো করা যাবে স্মার্ট কার্ডে। মূলত ২০টিরও বেশি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে স্মার্ট কার্ড লাগবে।
১. আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ঞওঘ) প্রাপ্তি। ২. ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন। ৩. পাসপোর্ট প্রাপ্তি ও নবায়ন। ৪. চাকরির জন্য আবেদন। ৫. স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়। ৬. ব্যাংক হিসাব খোলা। ৭. ব্যাংক হতে ঋণ প্রাপ্তি। ৮. সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন। ৯. সরকারি ভর্তুকি, সাহায্য, সহায়তা প্রাপ্তি। ১০. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি। ১১. বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইওঘ) প্রাপ্তি। ১২. শেয়ার আবেদন ও বিও অ্যাকাউন্ট খোলা। ১৩. ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি। ১৪. যানবাহন রেজিস্ট্রেশন। ১৫. বিভিন্ন বীমা স্কিমে অংশগ্রহণ। ১৬. বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রেশন। ১৭. নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ। ১৮. গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ। ১৯. টেলিফোন ও মোবাইল সংযোগ। ২০. বিভিন্ন ধরনের ই-টিকিটিং এবং ২১. আসামি-অপরাধী শনাক্তকরণ প্রভৃতি।
নান্দনিক ডিজাইনের স্মার্ট কার্ড
স্মার্ট কার্ডের ডিজাইন নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচিতি ও জাতীয় প্রতীকসমূহকে ধারন করে। দেশজ অনুভূতি এবং দেশাত্মবোধক বিভিন্ন উপাদানকে বিশেষভাবে বিবেচনায় রেখে নান্দনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে স্মার্ট কার্ড। প্রধান্য পেয়েছে লাল-সবুজের পতাকা, যা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রাণের আবেগের সাথে সম্পৃক্ত। জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় পাখি দোয়েল, জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং চা পাতা পেয়েছে প্রাধান্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং বর্তমান জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, সরকারের লোগো, ইধহমষধফবংয-এর সংক্ষিপ্ত রূপ ইএউ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জাতীয় প্রতীক ও প্রতিকৃতির সব উপাদান সংযুক্ত করা হয়েছে; শুধু সৌন্দর্যবর্ধন ও চেতনার প্রতিফলন হিসেবে নয় বরং এসবের ব্যবহার করা হয়েছে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য হিসেবেও।
স্মার্ট কার্ডের সামনের দিকের উপরিভাগের বাম কোণায় রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের লোগো। উপরিভাগের মাঝের অংশে প্রথম লাইনে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’। দ্বিতীয় লাইনে ‘গভার্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’। আর তৃতীয় লাইনে লেখা আছে ‘ন্যাশনাল আইডি কার্ড’। কার্ডের উপরিভাগে ডান কোণায় রয়েছে জাতীয় ফুল শাপলা, একটি জলছাপ, ঘোস্ট ইমেজ, মাঝে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে লাল-সবুজ পতাকা, হলোগ্রাম এবং সিএলআই। নাগরিকের কিছু তথ্য দৃশ্যমান রাখা হয়েছে এবং দৃশ্যমান তথ্যসহ বাকি সব তথ্য মেমোরি চিপে সংযোজিত রয়েছে।
স্মার্ট কার্ডের পেছনের দিকে উপরিভাগে থাকছে ২টি বার কোড। বার কোডের নিচে বাম পাশে লেখা ‘এই কার্ডটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পত্তি। কার্ডটি ব্যবহারকারী ব্যতীত অন্য কোথাও পাওয়া গেলে নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দেয়ার অনুরোধ করা হলো’। ডান পাশে রয়েছে শাপলা ফুলের ছবি, ইউভি লাইটের মাধ্যমে দৃশ্যমান বাংলাদেশ সরকারের লোগো, ঘোস্ট ইমেজ। মাঝে আছে নাগরিকের রক্তের গ্রুপ এবং নিচের অংশে রয়েছে প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও প্রদানের তারিখ।
স্মার্ট কার্ডের যত কথা: আন্তর্জাতিক
মান ও কঠিন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য
স্মার্ট কার্ডে ব্যবহার করা হয়েছে পলি কার্বনেট। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের মেয়াদ ১৫ বছর। উন্নত দেশগুলোতে প্রচলিত স্মার্ট কার্ডেও পলি কার্বনেট ব্যবহার করা হয়, যার মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেমন ইনডেসট্রাকটিবল আই গ্লাস, ডিভিডি সারফেস, স্মার্ট কার্ড ইত্যাদি কাজে পলি কার্বনেটের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। কার্ডের নিরাপত্তার জন্য বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যেমন মঁরষষড়পযবং, ৎধরহনড়ি ঢ়ৎরহঃরহম, ংপৎববহ-ঢ়ৎরহঃরহম, ঙঠওং, ঃৎধহংঢ়ধৎবহঃ ্ গবঃধষষরপ যড়ষড়মৎধসং, টষঃৎধারড়ষবঃ রহশং ইত্যাদি সহজে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। পলি কার্বনেট কার্ডে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য এবং তথ্যাবলি বিভিন্ন লেয়ারে সন্নিবেশিত হয়। ফলে কোনো একটি লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাতে কার্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা তথ্যাবলির কোনো ক্ষতি হয় না এবং তথ্যাবলি স্পষ্টভাবেই দৃষ্টিগোচর হয়। পলি কার্বনেট কার্ড অথেনটিকেট করা সহজ কিন্তু জাল করা প্রায় অসম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিচয়পত্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসমূহের ক্রমাগত গবেষণার মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন করছে, যা সহজে পলি কার্বনেট কার্ডে সন্নিবেশ করা যায়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা স্বদেশ খবরকে জানান, স্মার্ট কার্ডে ব্যবহৃত চিপসমূহ তিন ধরনের হয়ে থাকে Ñ কনটাক্ট চিপ, কনটাক্টলেস চিপ ও জিইএস হাইব্রিড চিপ (কমবিনেশন অব কনটাক্ট অ্যান্ড কনটাক্টলেস)। স্মার্ট কার্ডে কনটাক্ট চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রের সংখ্যা, চিপের দর, সম্ভাব্য সেবা প্রদানের অবকাঠামোসমূহ কনটাক্ট চিপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে ভবিষ্যতে অবকাঠামোগত পরিবর্তন হলে এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে উপযুক্ত চিপ সন্নিবেশিত করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া স্মার্ট আইডি কার্ডের নিরাপত্তার জন্য বিশ্বব্যাপী শতাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য প্রচলিত রয়েছে। শতাধিক নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের প্রতিটির জন্য নির্ধারিত রয়েছে আলাদা আলাদা মূল্যমান। শক্ত নিরাপত্তাবিশিষ্ট পরিচয়পত্রে শতাধিক বৈশিষ্ট্যের মধ্য হতে বিভিন্ন মাত্রার নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংযোজন করা হয়ে থাকে, যা সাধারণত ১৫ থেকে ২৫টির মধ্যে সীমিত হয়। কতগুলো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশ করা উচিত, আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা বা স্ট্যান্ডার্ড নেই। সার্বিক দিক বিবেচনা করে, স্মার্ট কার্ডের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য তিন স্তরে বিন্যস্ত করে ২৫টি সন্নিবেশ করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বদেশ খবরকে বলেন, বাংলাদেশের স্মার্ট কার্ড আন্তর্জাতিক মানদ-ে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক কোয়ালিটি কন্ট্রোল স্ট্যান্ডার্ডকে সমর্থনকারী সার্টিফিকেট ও টেস্ট (যার জন্য যা প্রযোজ্য) বাধ্যতামূলক করে এ কার্ডের মানদ- নিশ্চিত করা হয়েছে। সুতরাং উন্নত যেকোনো দেশের কার্ডের সমকক্ষ বাংলাদেশের স্মার্ট কার্ড।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম স্বদেশ খবরকে আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের তথ্যভা-ারে ১০ কোটিরও বেশি নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত আছে। তথ্যের সঠিকতা ও ব্যবহারযোগ্যতার জন্য এই তথ্যভা-ার দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে একটি নির্ভরযোগ্য এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী ডেটাবেজ হিসেবে সমাদৃত ও অনুকরণীয়। স্মার্ট কার্ড ২০টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট পেয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তিতে ব্যক্তির যথার্থ পরিচয় নিশ্চিত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ডেটাবেজের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২৬টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজ ব্যবহার করে নাগরিক পরিচিতি সেবা গ্রহণ করছে।
রাজস্ব আয় এবং প্রবাসীদের
জন্যও স্মার্ট কার্ড
প্রবাসী বাংলাদেশিরাও স্মার্ট কার্ড পাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
অন্যদিকে পরিচিতি সেবার মাধ্যমে রাজস্ব আয় হচ্ছে সরকারের।
জানা যায়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ (সংশোধন আইন-২০১৩) অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের সাথে চুক্তিবদ্ধ সরকারি ও বেসরকারি ১২৬টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ডেটাবেজ হতে নাগরিকদের পরিচিতি যাচাই করে থাকে। সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে মিল পাওয়া গেছে ৪৪ কোটি ৮১ লাখ ৬৭ হাজার ৭৯২টি। ৫৬ কোটি ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৭৬টি আবেদনের ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হারানো বা নষ্ট হওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র প্রতিস্থাপন ইত্যাদি সেবাকার্যের জন্য ফি আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হচ্ছে। ১৫৪ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ১৫৬ টাকা ৯৪ পয়সা রাজস্ব আয় সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে।
সহজ প্রক্রিয়ায় পাওয়া যায় স্মার্ট কার্ড ভোগান্তি নেই, সর্বোচ্চ সেবা
স্মার্ট কার্ড পেতে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী সশরীরে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে আসতে হয়। সঙ্গে অবশ্যই মূল জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে। যারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি তাদের মূল নিবন্ধন স্লিপ নিয়ে আসতে হবে। যাদের মূল জাতীয় পরিচয়পত্র বা নিবন্ধন স্লিপ হারিয়ে গেছে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে, জিডির মূল কপি নিয়ে উপজেলা অথবা থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। কোথায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে সে সম্পর্কে তথ্য জানতে যেতে হবে ওয়েবসাইটে (যঃঃঢ়://িি.িহরফ.িমড়া.নফ/)। ওয়েবসাইটে গিয়ে তথ্য জানা কঠিন মনে হলে সহজ সমাধান হলো ফোন কল। যেকোনো মোবাইল নম্বর হতে ১০৫ নম্বরে ফোন দিয়ে কল সেন্টারের মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ সম্পর্কিত তথ্যাদি জানা যাবে। এসএমএসের মাধ্যমেও জাতীয় স্মার্ট কার্ড বিতরণ সম্পর্কে তথ্য জানা যাবে। এর জন্য প্রথমে ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে ংপ লিখে স্পেস দিয়ে আপনার ১৭ সংখ্যার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর লিখে ১০৫ নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে। যাদের ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর তাদের আইডি নম্বরের আগে জন্ম সাল যোগ করতে হবে।
স্মার্ট কার্ডে প্রয়োজনীয় তথ্য সংশোধন
উপজেলা, থানা বা জেলা নির্বাচন অফিসে ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। সংশোধনের পক্ষে উপযুক্ত কাগজপত্র আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। সব সংশোধনের রেকর্ড সেন্ট্রাল ডেটাবেজে সংরক্ষিত থাকে। জীবিত পিতা, স্বামী, মাতাকে ভুলক্রমে মৃত উল্লেখ করার কারণে সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
বিয়ের পর স্বামীর নাম সংযোজন করা যায় ছোট্ট একটি প্রক্রিয়ায়। নিকাহনামা ও স্বামীর আইডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। বিবাহ বিচ্ছেদ হলে বিচ্ছেদ সংক্রান্ত দলিল (তালাকনামা) সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর নতুন বিবাহ করে আগের স্বামীর নামের স্থলে বর্তমান স্বামীর নাম সংযুক্ত করতে প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের তালাকনামা ও পরবর্তী বিয়ে কাবিননামাসহ সংশোধন ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
পেশা পরিবর্তন করতে হলে প্রামাণিক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে; যদিও আইডি কার্ডে এ তথ্য মুদ্রণ করা হয় না।
ছবি অস্পষ্ট হলে বা অন্য কোনো কারণে ছবি পরিবর্তন করতে হলে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হবে। নিজ, পিতা, স্বামী, মাতার নামের বানান সংশোধন করতে এসএসসি-সমমান সনদ, জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ, চাকরির প্রমাণপত্র, নিকাহনামা; বাবা, স্বামী, মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়। নিজের ডাকনাম বা অন্য নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য এসএসসি-সমমান সনদ, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী-স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিড ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, ওয়ারিশ সনদ, ইউনিয়ন, পৌর বা সিটি করপোরেশন থেকে নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র লাগবে। পিতা-মাতা মৃত হলে তা উল্লেখ করতে চাইলে মৃত্যুসনদ দাখিল করতে হবে।
শুধু আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ফরম-১৩ এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তবে একই ভোটার এলাকার মধ্যে পরিবর্তন বা ঠিকানার তথ্য বা বানানগত কোনো ভুল থাকলে সাধারণ সংশোধনের আবেদন ফরমে আবেদন করে সংশোধন করা যাবে। বয়স বা জন্ম তারিখ পরিবর্তন করতে হলে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। এসএসসি বা সমমানের সনদ প্রাপ্ত না হয়ে থাকলে সঠিক বয়সের পক্ষে সব দলিল নিয়ে আবেদন করতে হবে। স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে হলে নতুন স্বাক্ষরের নমুনাসহ গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। স্বাক্ষর একবারই পরিবর্তন করা যাবে এবং এক তথ্য শুধু একবার সংশোধন করা যাবে। তবে যুক্তিযুক্ত না হলে কোনো সংশোধন গ্রহণযোগ্য হবে না।
স্মার্টকার্ড ও ভবিষ্যতে চোখ
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই স্মার্টকার্ড প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভবিষ্যতে ট্র্যাভেল ডকুমেন্টসহ আরও নানাবিধ কাজে এই কার্ড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এই আশাবাদ জানিয়ে স্বদেশ খবরকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সকল নাগরিককে বৈধ পরিচয়পত্র প্রদান করার টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ লক্ষ্য (এসডিজি) ১৬.৯ ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে কার্যত স্মার্ট এক বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যই ফুটে ওঠে। বাংলাদেশে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধায় যে বিশাল অগ্রগতি দেখা যায়, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও এক্ষেত্রে এতটা এগোতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা ও উন্নয়ন কৌশলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। স্মার্ট কার্ড শুধু বর্তমানের প্রয়োজন নয়, তার থেকেও বেশি প্রয়োজন ভবিষ্যতের জন্য। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, এনডিসি, পিএসসি বলেন, স্মার্ট কার্ড রিডার ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বাসায় বসে স্মার্ট কার্ড অ্যাপস-এর মাধ্যমে কার্ডে রক্ষিত তথ্যাবলি দেখা যাবে, যা গত ২ মার্চ (২০২০) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উদ্বোধন করেছেন। এর ফলে যেকোনো স্থানে স্মার্ট কার্ড রিডার ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো ধরনের প্রতারণা রোধ করা সম্ভব হবে।
0 মন্তব্যসমূহ