বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সর্বাধিক অবদানকারী ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ!

 মেহেদী মাসুদ : আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে প্রভাবশালী ২০ দেশের তালিকায় আসছে বাংলাদেশের নাম, এমনটাই বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্প্রতি শেরেবাংলা নগরে অর্থমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেনসহ বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠককালে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।


অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের মতে, ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যেসব দেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ থাকবে। শুধু তাই নয়, ওই সময় বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে এমন শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকবে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সেখানে ১শ’ ভাগের দশমিক ৯ ভাগ অবদান রাখবে। যেখানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডার অবদানও একই। ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে বাংলাদেশের অর্থনীতির এ সম্ভাবনা উঠে এসেছে।

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে চীন। চীনের অবদান থাকবে সবচেয়ে বেশি, যা ২৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ভারত। ওই সময়ে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতের অবদান দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষমতাধর এই দেশটির অবদান থাকবে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ইন্দোনেশিয়া।

অর্থমন্ত্রী জানান, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে এবং সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে আমাদের অগ্রযাত্রার যে গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে তাতে আশা করা যায় এর পূর্বেই আমরা সে আশা পূর্ণ করতে পারব। আশা করা যায় অচিরেই বাংলাদেশ জি-টুয়েন্টি দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতা, আর্থিক খাত সংস্কারের পদক্ষেপ, নারীদের কর্মস্থান ও নারী ক্ষমতায়নের প্রশংসা করেন এবং আগামীতে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


১০ মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ১১.৬১%

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি আয় বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার, যা রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে সর্বশেষ এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আর গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। অন্যদিকে এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত বছর এপ্রিলে আয়ের পরিমাণ ছিল ২৯৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের আয় ধারাবাহিকভাবে ভালো হওয়ায় রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৈরী পোশাক পণ্যের রপ্তানি আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৬৭৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৮৪৯ কোটি ৭ লাখ ডলারের পণ্য, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি।

পোশাক খাতের নিট পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় দুই-ই বেড়েছে। ১ হাজার ৩২১ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই খাতে রপ্তানি ছিল ১ হাজার ২৫৪ কোটি ২ লাখ ডলার।

আলোচ্য সময়ে ওভেন পণ্যেও (শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পোশাক) রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ১ হাজার ৩৫৩ কোটি ১৮ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৪৪০ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

জুলাই-এপ্রিল সময়ে বড় পণ্যসমূহের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে।এই খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৩ লাখ ডলার, যার প্রবৃদ্ধি ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মাছ রপ্তানি হয়েছে ৪৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এর প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ সময়ে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৭৯ কোটি ৯ ডলার, এতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। বিগত অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে চামড়া ও চামড়জাত পণ্যের রপ্তানি ছিল ৯১ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের, এবারের একই সময়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। পাশাপাশি আসবাবপত্র, হস্তশিল্প, বিশেষায়িত টেক্সটাইল পণ্য, সিরামিক পণ্য, রাসায়নিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ