নিজস্ব প্রতিবেদক : সার্বিক ছাড় না থাকলেও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোম্পানিতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে করের পার্থক্য আড়াই শতাংশই রাখা হয়েছে। তবে দুই েেত্র (তালিকা ও অ-তালিকাভুক্ত) এবার করের হার কমানো হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত বা পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির েেত্র করপোরেট কর ৪০ শতাংশের বিপরীতে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির েেত্র ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।
এদিকে রপ্তানি পোশাক প্রস্তুতকারী গার্মেন্টস খাতের কোম্পানিতে করের হার বৃদ্ধি করা হলেও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর ব্যবধান রাখা হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্ভাবনাময় খাতের কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে উৎসাহী হবেÑ যা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
আগের বছর রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে করপোরেট কর ছিল ১২ শতাংশ, যা এবার প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। আর পুঁজিবাজারে এলে কর দিতে হতো ১২ শতাংশ, এবার করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। সার্বিক কর বৃদ্ধি পেলেও পুঁজিবাজারে নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে এই ব্যবধান সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, পাবলিকলি ট্রেডেড (পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত) কোম্পানির করপোরেট কর ২৫ শতাংশ, যা দণি এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ কম। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে করহার বেশি হওয়ায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বিকভাবে করপোরেট কর না কমলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার হ্রাস পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। করপোরেট করে সার্বিক ছাড় থাকলে আরো বেশি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হতো। আর পুঁজিবাজারে আসলে কর ব্যবধান আরো বাড়ানো উচিত ছিল। কিন্তু সেই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা বাজেটে ছিল না। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমতা বাড়লে পরোভাবে বিনিয়োগকারীই উপকৃত হবেন। বর্তমানে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আয়ের ৪০ শতাংশ বা ১০০ টাকা আয়ে ৪০ টাকা কর দেয়। এই করহার শতকরা ২ দশমিক ৫ টাকা কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ টাকা করা হয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে সরকারকে কর দেয় ২৫ শতাংশ। আর অ-তালিকাভুক্ত বা পুঁজিবাজারের বাইরে থাকলে কর দিতে হয় ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে ও একটি গতিশীল পুঁজিবাজার গড়তে আরো বেশি কর ব্যবধান চেয়েছিলেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। সার্বিকভাবে করপোরেট করে কোনো ছাড় না দিয়ে আগামী অর্থবছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ কর ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এতে রাজস্ব কিছুটা কমলেও বিনিয়োগকারীর প্রতি ইতিবাচক বার্তা যাবে।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী, পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ ও অ-তালিকাভুক্ত ৩৫ শতাংশ। পাবলিকলি ট্রেডেড ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার অনুমোদিত ব্যাংক, বীমা ও প্রতিষ্ঠানের কর ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ৪০ শতাংশ। আর অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর ৪০ শতাংশ, যা আগে ছিল ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের েেত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়েছে। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সর্বপ্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির ৪৫ শতাংশ, মোবাইল ফোন অপারেটর পাবলিকলি ট্রেডেড ৪০ শতাংশ আর অ-তালিকাভুক্ত ৪৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের বছরও একই ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কাজেই একটি গতিশীল পুঁজিবাজার গড়তে নতুন নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তি প্রয়োজন। কিন্তু সুশাসন ও স্বচ্ছতার অভাবে অনেক কোম্পানি বাজারে আসতে চায় না। যার জন্যই করহারে ছাড় দিয়ে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হয়। বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ১০ শতাংশ ব্যবধান হলেও বাড়িয়ে ২০ শতাংশ ব্যবধানের দাবি ছিল
সংশ্লিষ্টদের।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান এই ১০ বা ২০ শতাংশ না কমিয়ে ৫০ শতাংশ করা উচিত। অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত থাকবে না তাকে যদি ১০০ টাকা কর দিতে হয়, তাহলে পুঁজিবাজারে যে প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত থাকবে তাকে কর দিতে হবে তার অর্ধেক অর্থাৎ ৫০ টাকা। এতে মাত্র ১০ শতাংশ কর রেয়াতের সুবিধা পেতে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে অনিচ্ছুক তারা ৫০ শতাংশ সুবিধা পেলে অবশ্যই পুঁজিবাজারে আসবে। আশার কথা হলো তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করায় এখন অনেক নতুন নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসবে। নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে তা সবসময়ই বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল বার্তা নিয়ে আসে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পর তাই আশার আলো দেখছেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ শামসুল আলম এ বিষয়ে স্বদেশ খবরকে বলেন, বাজেটে দেয়া এই প্রস্তাবে ব্যাংক ও আর্থিক খাত চাঙা হবে। সরাসরি উপকৃত না হলেও পরোভাবেই উপকৃত হবে বিনিয়োগকারীরা। এতে করে পুঁজিবাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর ব্যবধান নতুন কোম্পানিকে বাজারে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে। এসবের ফলস্বরূপ বলা যায়, ১ জুলাই থেকে এবারের বাজেট কার্যকর হতে শুরু করলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে করপোরেট কর কমানোয় এর সুফল পুঁজিবাজারের দিকে যেতে শুরু করবে; যার জন্য আশায় বুক বেঁধে আছেন পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।
0 Comments