নিজস্ব প্রতিবেদক : পাহাড় ধসে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায়। ১১ জুন থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রবাহে চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে অবিরাম বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়া বইতে থাকে। ১২ জুন রাত থেকে শুরু হয় পাহাড় ধস। এতে যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে তাতে দিন যতই গড়াচ্ছে ততই এর ভয়াবহ রূপ বেরিয়ে আসছে। ১৮ জুন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫ সেনা সদস্যসহ মোট ১৬১ জনে উন্নীত হয়েছে। নিখোঁজ সেনা সদস্যসহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে ১৫ জুন। রাঙ্গামাটি জেলা পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রাঙ্গামাটি জেলা শহরটি রীতিমতো ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ এসব জরুরি কার্যক্রম চালু করা যাবে তা সঠিকভাবে বলতে পারছে না প্রশাসনও। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক পুনরুদ্ধারে দুই মাসেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। সড়কটি যান চলাচলের উপযোগী করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাত-দিন কাজ করে চলেছে।
১৩ জুন পাহাড়জুড়ে ভূমিধস ও পাহাড়ি ঢলের আঘাতে যে প্রলয়ঙ্করী ঘটনা ঘটে গেছে তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোটা রাঙ্গামাটি শহর এলাকা। সঙ্গে রয়েছে জেলার ১০টি উপজেলা। শত শত বিদ্যুৎ খুঁটি ভেঙে গেছে। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কের ঘাগড়া এলাকা পর্যন্ত যোগাযোগ পুনরায় স্থাপিত হলেও ঘাগড়ার পর থেকে মানিকছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটি পৌঁছানোর কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। এর ফলে রাঙ্গামাটি শহরে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছে। বাজারে যে পরিমাণ রয়েছে এর মূল্য দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। পেট্রোল পাম্পগুলোতে যে সামান্য পরিমাণ জ্বালানি তেল রয়েছে তা লিটারপ্রতি ২০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। আর শহরজুড়ে দোকানগুলোতে কোথাও কোনো মোমবাতি মিলছে না। জ্বালানি তেলের অভাবে সংশ্লিষ্ট স্থানের জেনারেটরগুলোও আর চলছে না। মূলত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের অভাবে পুরো রাঙ্গামাটি জেলা রাতের বেলা অনেকটা ভুতুড়ে নগরীতে রূপ নিয়েছে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী সাবস্টেশন ও কাপ্তাই থেকে রাঙ্গামাটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। এ দুই স্থান থেকে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের শত শত খুঁটি উপড়ে যাওয়া ও ভেঙে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার এ বিপর্যয়। এর পাশাপাশি মানিকছড়ি থেকে সাপছড়ি পর্যন্ত পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ-গাছালির ধ্বংসস্তূপে সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সড়কটি পুনরুদ্ধারে অবিরাম কাজ করে চলেছে।
রাঙ্গামাটি শহরের ৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে সহস্রাধিক আশ্রিত নর-নারীর আহাজারি অব্যাহত রয়েছে। তাদের পরিবারের অনেক সদস্য পাহাড় চাপায় মারা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি হারানো শত শত মানুষ পুনরায় নতুন করে কখন বসতবাড়ি পাবে বা নিজেরা তৈরি করতে পারবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পুরো রাঙ্গামাটি জেলায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম থেকে। রাঙ্গামাটি শহরে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে তা অন্যান্য উপজেলায় পৌঁছায়। এ ক্ষেত্রে যেহেতু রাঙ্গামাটিতেই সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে, সে ক্ষেত্রে অপরাপর উপজেলায়ও বিপর্যয় নেমে এসেছে। শহরের ডিসির বাংলো, সার্কিট হাউজ এলাকাসহ সর্বত্র সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাঙ্গামাটি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এর উভয় পাশে পাহাড় ধস হওয়ায় ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটি এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ সব ধরনের পণ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় লঞ্চ মালিক সমিতি কাপ্তাই থেকে বিভিন্ন পণ্যের ছোট ছোট চালান নিয়ে আসা শুরু করেছে। এসব চালান চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই পৌঁছানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় মালবাহী বড় ধরনের কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে ছোট আকৃতির যানবাহনে যেসব পণ্যের চালান যাচ্ছে তা একেবারে অপ্রতুল।
রাঙ্গামাটি শহর ও উপজেলাগুলোতে এখনও অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসন সূত্রে এ সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ বলছে, কিন্তু বেসরকারি সূত্রসমূহ এ সংখ্যা অর্ধশতাধিক হবে বলে দাবি করছে। রাঙ্গামাটির ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে সিভিল প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষও স্বজনদের লাশের খোঁজে তৎপরতা চালাচ্ছে। ১৫ জুন দুপুরে মানিকছড়িতে নিখোঁজ থাকা সৈনিক আজিজুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে সেনা ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। এছাড়া বেদভেদি এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও ৩ জনের লাশ। উদ্ধার কাজে বেসরকারি প্রশাসন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও কাজ করছে। শহর ও দশ উপজেলায় এমন কোনো পাহাড় নেই যে যেখানে ধস সৃষ্টি হয়নি। এর ফলে এক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের আওতায় ১৩৭টি পয়েন্টে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সড়ক বিভাগ, এলজিইডির সঙ্গে সেনা সদস্যরাও একযোগে কাজ চালাচ্ছেন। এ বিপর্যয়কর পরিস্থিতি উত্তরণে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অপরদিকে, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ধস সৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও অনুরূপ টিমগুলো কাজ করছে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৩২ লাখ টাকা, ৫০ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ৫০০ বান টিন, ১৫ লাখ পিস সিআই শিটের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখায় ৫ লাখ টাকার অনুদান দেয়া হয়েছে। এ অর্থ উন্নয়ন বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মচারীদের এক দিনের বেতন থেকে প্রদান করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের ফল-ফলাদি পরিবহন ব্যবস্থার বিপর্যয়ের কারণে পচতে শুরু করেছে। বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ধরনের ফল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়ে থাকে রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। রাঙ্গামাটি থেকে বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি, জুরাইছড়িতে কোনো ধরনের ভোগ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যাচ্ছে না। ফলে এসব উপজেলায়ও বিপর্যয় নেমে এসেছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে লংগদু ও বাঘাইছড়িতে কিছু কিছু পণ্য সরবরাহ হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে পুরো রাঙ্গামাটি জেলায় বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। খাদ্য, পানীয় ও জ্বালানি সংকটে সাধারণ মানুষের অবস্থা অবর্ণনীয়। সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি অবহিত হয়ে দুই মন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব সংস্থার কর্মীরা উদ্ধার কাজেই দিন-রাত কাজ করছেন।
কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বান্দরবানের ৭ উপজেলায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। পাহাড় ধসের ফলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও বিপর্যয় নেমে এসেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে এখনও বান্দরবানের সঙ্গে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানছি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ার কারণে এ তিন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হতে আরও কদিন সময় লাগবে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। বান্দরবানে মোট ৭টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার ও আহতদের ৫ হাজার টাকা করে সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলা পাহাড়ি হলেও এ দুটি স্থান পাহাড়ি ঢলমুক্ত রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে এখনও বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার। টানা কয়েক দিনের বর্ষণে জেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পাহাড় ধস হয়েছে। এ জেলায় প্রাণহানির সংখ্যা এ পর্যন্ত ৪ জন হলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় প্রশাসন নড়াচড়া করলেও স্বাভাবিক সময়ে থাকে নির্বিকার। গত দশ বছরে এ জেলায় প্রাণহানি হয়েছে অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে শুধু রামগড় উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ২৮ জনের। খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার কলাবাগান, লেমচি বাজার, মোল্লাপাড়া, কৈবল্য পিঠ, আঠার পরিবার, শালবন ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পাহাড়ের ঢালে ঢালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে সহস্রাধিক পরিবার। অনবরত থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনের বর্ষণে কলাবাগান, শালবাগান, সবুজবাগসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস সৃষ্টি হয়েছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে অসংখ্য মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাহাড় কাটা ও পাহাড়ের ঢালে বসতি স্থাপনে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা বা নির্দেশনা নেই। ফলে পাহাড়ের চূড়ায় বা পাদদেশে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে বসতি। এর পাশাপাশি জুম চাষ ও বন উজাড় হওয়ার কারণে পাহাড় ধসের ঝুঁকি কেবলই বাড়ছে। রাঙ্গামাটি জেলায় যা ঘটেছে অনুরূপ ঘটনা যেকোনো মৌসুমে খাগড়াছড়ি এমনকি চট্টগ্রাম মহানগরীতেও ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনবরত বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটবেই। তবে পাহাড় ধসলেই যে মানুষকে মরতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভূমি ধস, পাহাড় ধসের ঘটনা পৃথিবীর বহু দেশেই ঘটে। কিন্তু সেখানে এত প্রাণহানি ঘটে না। আমাদের দেশে ঘটে এ কারণেই যে, আমরা পাহাড়কে পাহাড়ের মতো থাকতে দেই না। পাহাড় কেটে আমরা মাটি নিয়ে জলাশয় ভরাট করে মডেল টাউন গড়ে তুলি। পাহাড়ের বৃক্ষ আমরা নিধন করি নির্দয়ভাবে। পাহাড়ে জুমচাষ করি। তারচেয়েও মর্মান্তিক হলো পাহাড় কেটে আমরা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বসতবাড়ি স্থাপন করি। পাহাড়ের ওপর মানুষের এসব নির্দয় আচরণের কারণে কোনো রকম দাঁড়িয়ে থেকে সে তার অস্তিত্ব জানান দেয় ঠিকই কিন্তু একটু টানা বৃষ্টি হলেই সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ভেঙে পড়ে তারই কোলঘেঁষে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের উপরে।
রাঙ্গামাটিতে এমনটিই হয়েছে। আমরা যদি সতর্ক না হই, অর্থাৎ পাহাড়কে পাহাড়ের মতো থাকতে না দিই তাহলে ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম শহরের ৭টি স্থানে পাহাড় ও ভূমিধসে যে ১২৭ জন মানুষের মৃত্যু ও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এখন পাহাড়জুড়ে যে বিপর্যয় ঘটছে তা ভবিষ্যতে যেকোনো সময়ে চলতেই থাকবে।
২০০৭ সালে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের যে মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটে তার প্রেক্ষিতে গঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে ৩৬টি সুপারিশ দেয়া হয়েছিল। এর প্রথম দফায় বলা হয়েছিল, পাহাড় ধসের মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য পাহাড়ের ঢাল নির্ণয় করে তার ভিত্তিতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। একই সাথে ভৌগোলিক সার্ভের মাধ্যমে পাহাড়ের মাটির সক্ষমতা নির্ণয় করতে হবে।
বিশ্বে ভূমিকম্প ও অতিবর্ষণে সাধারণত ভূমি বা পাহাড় ধস হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এ পর্যন্ত অতিবৃষ্টির কারণেই পাহাড় ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের পাহাড়গুলোর মাটির গঠন খুবই দুর্বল। এগুলো পলিযুক্ত মাটি দিয়ে গঠিত। এ কারণে বালির আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
সে সময় পাহাড় ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশ সরকার গ্রহণ করে। সে সময় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ সংবলিত প্রস্তাব দেশের প্রত্যেক জেলায় পাঠানো হয়। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ৩৬টি সুপারিশে বলা হয়, সুষ্ঠু পাহাড় ব্যবস্থাপনার জন্য পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে জাতীয় পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা করা যেতে পারে। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশে বলা হয়, পাহাড় ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও পাহাড় ব্যবহারে অসর্তকতা পাহাড় ধসের অন্যতম প্রধান কারণ। পাহাড় ব্যবস্থাপনার সুপারিশে ব্যাপকভিত্তিক বনায়নের কথা বলা হয়। পাহাড়ি এলাকা থেকে যত্রতত্র বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য এলাকার পাহাড়ে যত্রতত্র গড়ে ওঠা বসতি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া দরকার। পাহাড়ে সড়ক, বসতঘর স্থাপনাসহ অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। তিন পার্বত্য জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অফিস না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। মোট কথা হলো এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে আরো বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
0 Comments