জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে জবি) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী এবং অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি পুরান ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। একসময় জগন্নাথ কলেজ নামে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।



ইতিহাসের পাতা থেকে:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরে, ১৮৭২ সালে, এর নাম পরিবর্তন করে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। কিশোরীলাল রায় নামক এক জনহিতৈষী এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন তাঁর পিতার নামে। ১৮৮৪ সালে এটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজ এবং ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে উন্নীত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং এর অনেক সম্পদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, ২০শে অক্টোবর, ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে "জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫" পাশের মাধ্যমে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।

বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদের অধীনে অনেকগুলো বিভাগ রয়েছে, যেখানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। কলা, বিজ্ঞান, আইন, ব্যবসায় শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল, এবং জীব বিজ্ঞান অনুষদ এখানে বিদ্যমান।

অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা:

  • ক্যাম্পাস: পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে এর প্রধান ক্যাম্পাস অবস্থিত। স্থান সংকুলান না হওয়ায় কেরানীগঞ্জে একটি নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের কাজ চলছে।
  • লাইব্রেরি: বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি আছে যেখানে প্রচুর বই, জার্নাল ও গবেষণা সাময়িকী রয়েছে।
  • অন্যান্য সুবিধা: আধুনিক ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাব, খেলার মাঠ, অডিটোরিয়াম এবং ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র রয়েছে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থী:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক মণ্ডলী রয়েছেন, যারা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এখানে প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে।

কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়:

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রাক্তন ছাত্রদের অবদানের জন্য পরিচিত, যারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
  • বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণা এবং প্রকাশনার উপর জোর দেয়।
  • বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রম এখানে প্রচলিত।

নতুন ক্যাম্পাস:

কেরানীগঞ্জে প্রায় ২০০ একর জমির উপর একটি নতুন ক্যাম্পাস তৈরির পরিকল্পনা চলছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

প্রশাসন:

  • উপাচার্য (ভাইস চ্যান্সেলর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী।
  • প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করেন।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিল এর নীতি নির্ধারণ করে।

ভর্তি প্রক্রিয়া:

  • সাধারণত, উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
  • বিভিন্ন বিভাগের জন্য আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়।
  • ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।

গবেষণা:

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করে।
  • শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব জার্নাল ও প্রকাশনা রয়েছে।

সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে।
  • নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদল, সঙ্গীত দল এবং বিতর্ক ক্লাব বেশ জনপ্রিয়।

আবাসন:

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য সীমিত সংখ্যক হল রয়েছে।
  • ছাত্রীদের জন্য কোন আবাসিক হল নেই।
  • কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাসে আবাসন ব্যবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

যোগাযোগ:

  • ওয়েবসাইট: https://jnu.ac.bd/
  • ফোন: +৮৮০-২-৯৫১-৬১১১
  • ফ্যাক্স: +৮৮০-২-৯৫৬-২০৯৯

কিছু উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী:

  • প্রেমেন্দ্র মিত্র (কবি ও সাহিত্যিক)
  • আনিসুজ্জামান (শিক্ষাবিদ ও লেখক)
  • ব্রজেন দাস (সাঁতারু)
  • মোহাম্মদ নাসিম (রাজনীতিবিদ)

আমি আশা করি এই তথ্য আপনার জন্য সহায়ক হবে

নবীনতর পূর্বতন